মধ্যপ্রাচ্যে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। অঞ্চলটি জুড়ে একটি বড় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরের জাহাজে পরপর কিছু হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী। এর জবাবে ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্য করে পালটা আক্রমণ শুরু করেছে ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও যুদ্ধ পরিস্থিতি অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘেও শুরু হয়েছে উত্তেজনা।
ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুসহ অঞ্চলটির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকে প্রথমে গাজা থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির হুমকি, এরপর লোহিত সাগরে পরিস্থিতি নিয়ে ত্রমবর্ধমান সংঘাতের পক্ষে-বিপক্ষে চলে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। ইউএন নিউজ।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে জাতিসংঘের ত্রাণপ্রধান বলেন, ‘ছিটমহল থেকে পালাতে বাধ্য করা যে কোনো গাজাবাসীকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত।’ এদিন গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস। বৈঠকে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত যে কোনো মানুষকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবশ্যই তাদের নিজ অঞ্চলে ফিরে আসতে দিতে হবে।’ এ বিষয়ে পালটা যুক্তি দিয়ে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, ‘অঞ্চলটিতে কোনো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি নেই। গাজার জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করার ইচ্ছা ইসরাইলের নেই।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে লোহিত সাগর ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তি নির্মাণবিষয়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খালেদ খিয়ারি বলেন, ‘হুথি বিদ্রোহী ও লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক শিপিং রক্ষাকারী মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ এ বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বাণিজ্যিক শিপিংয়ের বিরুদ্ধে হুথিদের ‘বেপরোয়া আক্রমণ ব্যাহত ও অবনমিত’ করার উদ্দেশ্যে ইয়েমেনের হুথি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে। এই আক্রমণগুলো ‘প্রয়োজনীয় ও আনুপাতিক ছিল’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গ্রিনফিল্ড আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আত্মরক্ষার অধিকার অনুশীলন করেছে।’
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজার পক্ষে কথা বলেছেন ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। বৈঠকে দেশটির রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভিয়ের সব আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভাষণ দিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন। ভাষণে ঝাং জুন বলেন, ‘কিছু দেশ ক্রমাগত মানবাধিকার প্রচার ও গণহত্যা প্রতিরোধের কথা বলে থাকে। কিন্তু গাজা পরিস্থিতির দিকে তাদের মনোযোগ নেই। এটি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। সংঘাতের অবসান ঘটাতে আমাদের শক্ত পদক্ষেপ দরকার।’
বৈঠকে গাজার ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন নিয়ে ইসরাইলি মন্ত্রীদের দেওয়া বিবৃতিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড। বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ইয়েমেনসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির বিষয়ে থমাস-গ্রিনফিল্ডও বক্তব্য রেখেছেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে বেসামরিকদের গাজা ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।