ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ‘ড্যানিয়েল’র তাণ্ডবে ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে লিবিয়ার বন্দর নগরী ডেরনা। ভেসে গেছে সাত মিটার (২৩ ফুট) উঁচু ভবন। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিখোঁজ ১০ হাজার ১০০ জন। শতাধিক সারিবদ্ধ লাশের ব্যাগে ভরে গেছে কাদামাখা শহরের রাস্তা। চলছে গণদাফনের প্রস্তুতি। দাফনের আগে লাশ শনাক্তকরণে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এপি, এএফপি।
লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট তারেক আল-খারজ একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা নিহতদের দাফনের আগে তাদের ডিএনএ নমুনা ও ছবি নেওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে সহজে লাশ শনাক্ত করা যায়।’
জাতিসংঘের সাহায্য বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানি না। তবে অনেকেই মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করছেন। আনুমানিক ৮ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের সহায়তার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। এখনো জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের তামের রমজান। রাস্তা ও সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ ও ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রেড ক্রসের ইন্টারন্যাশনাল কমিটির লিবিয়ার প্রতিনিধিদলের প্রধান ইয়ান ফ্রিডেজ এটিকে হিংসাত্মক ও নৃশংস বলে অভিহিত করেছেন।
ভারি বৃষ্টিপাত ও শক্তিশালী বাতাসে শহরটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাঁধ ভেঙে যায়। আল-বিলাদ ও আবু মনসুর নামক বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় ৩০ মিলিয়ন পানি ছড়িয়ে পড়ে শহরটিতে। এক বাসিন্দা বলেন, ‘নদীর দুপাশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলো সাধারণত বছরের এই সময়ে শুকিয়ে যায়। অথচ এখন দেখে মনে হচ্ছে যেন একটি স্টিম রোলার সেখান দিয়ে চলে গেছে, গাছ ও ভবন উপড়ে ফেলেছে।’ বেনগাজি মেডিকেল সেন্টারের হাসপাতালের বিছানায় থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা চতুর্থ তলায় যাই। পানি দ্বিতীয় তলায় পর্যন্ত এসেছিল। আমরা চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম।’ আরও বলেন, ‘আমি জানালা দিয়ে দেখি গাড়ি আর লাশগুলো পানিতে ভেসে যাচ্ছে। এটি স্থায়ী হয়েছিল ঘণ্টা দেড়েক। যদিও আমাদের কাছে তা এক বছরের মতো মনে হয়েছিল।’
চিহা পাড়ার বাসিন্দা আবদেলাজিজ বাউসম্যা (২৯) বলেন, তিনি প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। বলেন, সবাই মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে বা বন্যার পানিতে সমুদ্রে ভেসে গেছে। শোকাহত বাসিন্দাদের নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে পাওয়ার আশায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে যাওয়া বিল্ডিংগুলোর ধ্বংসাবশেষ ও বালির পাহাড় পরিষ্কার করা হচ্ছে।