রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিং রোডে এক ব্যক্তিকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে তাঁর কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর টাউন হলের ইউসিবি ব্যাংকের সামনে একটি প্রাইভেট কার থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া টাকা পাওয়া যায়নি।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সুমন মিয়া (৪৮), মাসুদ মিয়া (৫৩), আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেল (৪০), ইকবাল হোসেন (৪৫) ও সাইদুল হক (৪৩)। পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে মো. ইস্রাফিল নামের এক ব্যক্তি শ্যামলী থেকে লেগুনায় করে মোহাম্মদপুরের রিং রোডে একটি ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। সেদিন র্যাবের পোশাকে ও ওয়াকিটকি হাতে এক ব্যক্তি ইস্রাফিলকে লেগুনা থেকে নামান। আরও দুই ব্যক্তি একটি প্রাইভেট কার থেকে নেমে আসেন। তাঁরা ইস্রাফিলকে গাড়িতে তুলে হাতকড়া পরান। গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে সব টাকা লুট করে তাঁকে শেরেবাংলা নগর এলাকায় গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ফেলে যান। গাড়িতে র্যাবের পোশাক পরা অন্তত চারজনকে দেখতে পেয়েছিলেন ইস্রাফিল।
ওই ঘটনায় ইসরাফিলের ভগ্নিপতি মো. আবু তালেব খোরশেদ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এই ছিনতাইকারী চক্রটি আরও কয়েকটি ছিনতাইয়ে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ তদন্তে নেমে শ্যামলী এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের আশপাশের এলাকা ও আসামিদের যাত্রাপথের প্রায় ২০০ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহায়তা ও বিশ্বস্ত তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা গেছে। তবে ছিনতাই হওয়া সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ওই টাকা উদ্ধার এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের হেফাজতে থাকা ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেট কার, চারটি ভুয়া নম্বর প্লেট, র্যাবের পোশাকের মতো দুটি কালো কোটি, একটি ক্যাপ, একটি খেলনা পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি লাঠি ও পুলিশের দুটি স্টিকার জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল হক বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মতো নানাবিধ অপরাধ করে আসছিলেন। গত তিন মাসে তাঁরা র্যাব পরিচয়ে গাজীপুরের তুরাগ, কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মোট ২৫টি অপরাধের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা তিন মাস আগে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। গ্রেপ্তার সুমনের বিরুদ্ধে ১১টি, মাসুদ মিয়ার নামে ৬টি, আশরাফুলের নামে ১১টি এবং ইকবালের নামে ৩টি মামলা রয়েছে।