এখন প্রচণ্ড গরম চারদিকে! তবুও যদি সুযোগ মেলে ভ্রমণের। তবে কেউ হাতছাড়া করতে চাইবেন না। কিন্তু রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে ভ্রমণ যদি হয় বিব্রতকর—তাহলে তো আনন্দ নয়, ভোগান্তিই অপেক্ষা করবে। তাই গরমে ভ্রমণ মানেই একগুচ্ছ বাড়তি প্রস্তুতি ও সতর্কতা। সাবধান না হলে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা বা সংক্রমণ লেগে থাকতে পারে।
গরমে ভ্রমণ করতে হলে আপনাকে আগেই বেশকিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমে ভ্রমণের পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে—
বিশুদ্ধ পানির বোতল যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে। তাই পথে বের হওয়ার আগে বোতলজাত পানি অথবা বাসার ফুটানো বা ফিল্টারের পানি সঙ্গে নেবেন। গরমে শরীরের ঘাম দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া লবণ-পানির ঘাটতি পূরণে ওআরএস বা স্যালাইন ব্যাগে রাখুন। শুধু নিজের নয়, ভ্রমণের অন্য সদস্যদের জন্যও রাখুন।
গরমে হালকা রঙের সুতি বা লিনেন কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাক আরামদায়ক। এ ধরনের পোশাকের দিকে মনোযোগী হন। শিশুর জন্য একাধিক পোশাক সঙ্গে রাখুন। অতিরিক্ত ঘাম হলেই দ্রুত পোশাক বদলে নিন। ভ্রমণে বয়স্ক সঙ্গী থাকলে তাদের জন্যও নরম ও আরামদায়ক পোশাক রাখুন।
রোদ থেকে মাথা ও ত্বক রক্ষা করতে ব্যবহার করুন ছাতা বা ক্যাপ। হ্যাট ও স্কার্ফও মাথা ঢাকার ভালো বিকল্প। এসব ব্যবহারে একটানা রোদে হাঁটলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
রোদে বের হওয়ার আগেই চোখে দিন ইউভি প্রটেকশন যুক্ত সানগ্লাস। ত্বকে লাগান ভালো মানের সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিন বাইরে বেরোনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে লাগান। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পুনরায় প্রয়োগ করুন। ঘামে বা পানিতে নষ্ট হলে পুনরায় ব্যবহার করুন।
বাড়ি থেকে নেওয়া শুকনো খাবার যেমন- বিস্কুট, বাদাম, পাউরুটি সঙ্গে রাখুন। কলা বা আপেলের মতো সহজপাচ্য ফল উপকারী। তাই এগুলোও সঙ্গে রাখতে পারেন। শিশুর জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত খাবার নিতে ভুলবেন না। গ্লুকোজ, চকলেট বা চিনিজল গরমে দ্রুত এনার্জি জোগাবে। তাই এগুলোও সঙ্গে রাখুন।
প্রাথমিক চিকিৎসা কিটে রাখুন ব্যান্ডএইড, অ্যান্টিসেপটিক, তুলা, স্যাভলন, পেইন রিলিফ, গ্যাস ও ডায়রিয়ার ওষুধ। সঙ্গে রাখুন ব্যক্তিগত ওষুধ, যেমন- ইনহেলার, ইনসুলিন। এ ছাড়া প্রেসার মাপার মেশিনও সঙ্গে রাখতে পারেন।
শিশুর জন্য ডায়াপার, পাউডার, বেবি লোশন, ভেজা টিস্যু ও তোয়ালে সঙ্গে রাখুন। গরমে শিশুদের ত্বকে দ্রুত ঘামাচি হয়—সেটি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখুন।
হিট স্ট্রোক বা অতিরিক্ত ঘাম হলে ভেজা তোয়ালে বা আইস প্যাক সঙ্গে থাকা জরুরি। গলায় বা মাথায় তা ব্যবহার করলে দ্রুত স্বস্তি দেয়।
টিস্যু, তোয়ালে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা সাবান—সবই রাখতে হবে ব্যাগে। খাবারের আগে-পরে হাত পরিষ্কার রাখা জরুরি।
গন্তব্যের গুগল ম্যাপ, অফলাইন লোকেশন, হোটেল বা ক্লিনিকের নাম্বার ফোনে সংরক্ষণ করুন। প্রয়োজনে যে গন্তব্যে যাবেন; সেখানকার সরকারি হেল্পলাইন নম্বর কিংবা পরিবারের কাছের জনের কন্ট্যাক্টও হাতে রাখুন। রিচার্জেবল ছোট ফ্যান ও পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
ভ্রমণে বের হওয়ার পর অবশ্যই বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভ্রমণ হোক নিরাপদ, ঝুঁকি না বাড়িয়ে।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়টা রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। এ সময় ঘোরাঘুরি কমিয়ে আনুন। প্রয়োজনে ছায়াময় জায়গায় বিশ্রাম নিন।
পানি পিপাসা না লাগলেও অল্প অল্প করে পানি পান করুন। এ ছাড়া চিনি-লবণ যুক্ত পানি বা স্যালাইন পান করুন। এগুলো পান করলে শরীরের লবণের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
মাথা ঘোরা, তীব্র ঘাম, দুর্বলতা, এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ছায়ায় নিয়ে যান। ঠান্ডা পানির কাপড় গায়ে দিন এবং দ্রুত চিকিৎসা নিন।
শিশু ও বয়স্কদের শরীরের সহনশীলতা কম। তাই তাপমাত্রার পরিবর্তনে তারা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাদের দিকে আলাদা নজর দিন। সুনির্দিষ্ট ওষুধ, ছায়া, হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত পানি দিন।
রাস্তার খোলা শরবত বা ফলের রস না খাওয়াই ভালো। এতে ব্যাকটেরিয়া থাকার আশঙ্কা বেশি। পরিচ্ছন্ন পাত্রে নিজে তৈরি পানীয়ই নিরাপদ। এ ছাড়া গরমে বেশি খাবার না খাওয়াই ভালো।
একটু সতর্ক হলেই আপনার গরমের ছুটির ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরামদায়ক। ভিড়ের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার অভ্যাস, এবং পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস আপনাকে রক্ষা করবে নানা অসুখ-বিসুখ থেকে।
এভাবে প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করলে ভ্রমণ হবে আরামদায়ক। এতেই পেতে পারেন সুন্দর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা যতই বাড়ুক, আনন্দকে যেন তা ছুঁতে না পারে।