একইদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অর্জনের মুকুটে দুটি নতুন পালক। মিরপুরে ভারত নারী দলের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েরা পেয়েছে ঐতিহাসিক প্রথম জয়। আর সিলেটে পুরুষ দল পেয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি ২০ সিরিজ জয়ের স্বাদ। প্রথম টি ২০র মতো বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচও গড়িয়েছিল শেষ ওভারে। তবে এবার কোনো নাটক হয়নি। শামীম পাটোয়ারীর চারে পাঁচ বল বাকি থাকতেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা। আফগানিস্তানকে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ছয় উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। বৃষ্টির বাধায় ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে আফগানদের সাত উইকেটে ১১৬ রানে বেঁধে ফেলে জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দিয়েছিলেন বোলাররা। তাসকিন আহমেদ তিনটি ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান নেন দুটি করে উইকেট। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৯। লিটন দাস ও আফিফ হোসেনের ৬৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতে রান তাড়ার শুরুটা দুর্দান্ত হলেও দশম ওভারে মুজিব উর রেহমানের জোড়া ছোবলে জোর ধাক্কা খেয়েছিল বাংলাদেশ। এক রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে তুলে নেন মুজিব। লিটন ৩৬ বলে ৩৫ এবং আফিফ ২০ বলে করেন ২৪ রান।
ছোট লক্ষ্যে শুরুতেই চাপমুক্ত থাকার চিন্তা মাথায় ভর করল লিটনের। ফজল হক ফারুকির প্রথম ওভারেই দুই চার আদায় করে নেন লিটন। পরের ওভারে অভিষিক্ত ওফাদার মোমান্দকে হ্যাটট্রিক চারে স্বাগত জানালেন এই ডানহাতি ব্যাটার। দুই ওভার শেষে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ২৮ রানে। পরের ওভারে মাত্র পাঁচ রান হলেও পাওয়ার প্লে’র পাঁচ ওভার শেষে দুই ওপেনার তুলে ফেলেন ৫০ রান। এরপর রানের গতি কিছুটা কমে যায়। দশম ওভারে মুজিব জোড়া শিকার করেন। দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে লিটনকে ফেরানোয় বড় ভূমিকা ছিল অধিনায়কের। এক বল পরই ছক্কার চেষ্টায় লং মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফিফ। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটার আউট হওয়ায় ধাক্কা লাগে স্বাগতিব শিবিরে। পরের ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে ইয়র্কার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন। তবে সাকিব ও তাওহিদ হৃদয় ২১ বলে ৩১ রানের জুটিতে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়। আগের ম্যাচের নায়ক হৃদয় দুর্দান্ত এক ছক্কার পর ওমরজাইয়ের বলে উঠে এসে মারতে গিয়ে আউট হয়ে ফেরেন। করেন ১৭ বলে ১৯ রান। তবে সাকিব ১১ বলে ১৮ এবং শামীম সাত বলে সাত রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। দুটি করে উইকেট নেন মুজিব ও ওমরজাই।
প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। কাঁধের চোটে দলের বাইরে যেতে হয়েছে রনি তালুকদারকে। আগের ম্যাচে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জেতানো শরীফুল ইসলামকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। দুজনের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান আফিফ ও হাসান মাহমুদ। পাঁচ ম্যাচ পর একাদশে ফিরলেন আফিফ। এছাড়া প্রথম ম্যাচের একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে নামে আফগানিস্তানও। ফরিদ মালিকের জায়গায় টি ২০ অভিষেক হয় ওয়াফাদার মোমান্দের। এই সংস্করণে আফগানিস্তানের ৫১তম ক্রিকেটার ২৩ বছর বয়সি এই পেসার। টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দেয় বোলাররা। পাওয়ার প্লেতে আফগানিস্তানের ব্যাটারদের মেলে ধরারই সুযোগ দেননি তাসকিনরা। ডানহাতি এই পেসার তুলে নেন দুটি উইকেট। ষষ্ঠ ওভারে ১৪ রান নিয়ে কিছুটা গুছিয়ে নেয় আফগানরা।
তবুও ছয় ওভারে আফগানিস্তানের সংগ্রহ দুই উইকেটে ৩৪। দ্বিতীয় ম্যাচের গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে নতুন বলের পূর্ণ ফায়দা নিয়েছেন তাসকিন। দুই ওপেনারকেই ফেরান তিনি। সাফল্য না পেলেও দুই ওভারে মাত্র চার রান দেন হাসান মাহমুদ। শুরুর ভালো সময়টা ধরেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন নাসুম ও সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বল হাতে নিতেই এবং দলীয় ৭.২ ওভারেই বাদ সাধে বৃষ্টি। আফগানিস্তানের রান তখন ৩৯। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকার পর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে নতুন করে খেলা শুরু হয়। বিরতি শেষে খেলা শুরুর পরপরই জোড়া শিকারের সুযোগ তৈরি করেন নাসুম আহমেদ। কিন্তু সাকিব ও লিটনের ক্যাচিং ব্যর্থতায় সাফল্য পেলেন না ঘরের ছেলে। নবম ওভারে নাসুম অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট ডেলিভারি বেশ জোরেই অফ সাইডে ড্রাইভ করেন নবী। বল চলে যায় সোজা কভারে দাঁড়ানো সাকিবের কাছে। সেটি হাতে রাখতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরের বলে লেংথ ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় নবীর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যাওয়া বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি লিটন। ১৫ রানে দু’বার বেঁচে যাওয়া নবী অবশ্য পরের ওভারেই মোস্তাফিজের শিকার হন। উইকেট হারালেও ইব্রাহিম জাদরান পালটা আক্রমণে রান বাড়িয়ে যান। সাকিব ১১তম ওভারে এসেই জোড়া শিকার করেন। ইব্রাহীম জাদরান ও নাজিবউল্লাহ জাদরানকে ফেরান বাংলাদেম অধিনায়ক। দ্রুত পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা আফগানিস্তান আক্রমণের পথই বেছে নেন। আজমতউল্লাহ জাজাই ও করিম জানাতের ঝড়ো জুটিতে ১৪তম ওভারেই একশ ছুঁয়ে ফেলেন। তবে এই দুজনের বিদায়ে শেষের দাবি মেটাতে পারেননি রশিদ খানরা।