একটি সড়কের অভাবে দুর্ভোগের শেষ ছিল না ১০ গ্রামের মানুষের। ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুল-কলেজ যেতে পারত না। বর্ষাকালে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়া ছিল রীতিমত দুঃসাধ্য। রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে না পেরে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। অপরদিকে জলাবদ্ধতার কারণে ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারতেন না কৃষক। এবার সেখানে পাকা সড়ক নির্মাণ ও সেচের জন্য সরু খাল তৈরি করায় শেষ হয়েছে দুর্ভোগের দিন। বদলে গেছে ১০ গ্রামের আর্থ-সামাজিক চিত্র।
পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর লোহাগড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে সড়কটি চলে গেছে আতাইকুলা-সুজানগর পর্যন্ত। রাস্তার দুই পাশে কয়েকশ বিঘা ফসলী জমি। চার দশমিক সতেরো কিলোমিটার এই সড়কটি নিয়ে দুর্ভোগ আর আক্ষেপের শেষ ছিল না এলাকাবাসীর। অপরদিকে সেচের জন্য খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতায় একটির বেশি ফসল চাষাবাদ করতে পারতেন না কৃষকরা।
তবে, এবার শেষ হয়েছে সব দুর্ভোগ আর কষ্টের। কারণ, কাঁচা সড়ক পাকা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে সরু খাল। আর তাতেই পাল্টে গেছে চোমড়পুর, লোহাগাড়া, স্বরুপপুর, শ্রীকোল, দড়ি শ্রীকোল, হাপানিয়া, লক্ষ্মীকোল, চরপাড়া ও চর হাপানিয়াসহ ১০ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা। এ কারণে উচ্ছ্বসিত তারা।
পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী বলেন, এই এলাকার মানুষের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার উপায় ছিল না। অনেক গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মারা গেছে। কৃষক একটির বেশি ফসল আবাদ করতে পারতেন না। বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের অধীনে একটি পাকা সড়ক আর সেচ ক্যানেল পুনঃখনন করায় কি যে উপকার হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
বিএডিসি পানাসি পাবনা প্রকল্প সূত্র জানায়, পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার সেচ ক্যানেল পুনঃখনন করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার আরসিসি গোপাট সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ দুটি বাস্তবায়ন করেছে বিএডিসি পাবনার সেচ বিভাগ। গত জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে গত মে মাসে শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ।
লোহাগড়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মোল্লা বলেন, কাঁচা সড়কে কাঁদার মধ্যে লুঙ্গি মালকাছা দিয়েও এই সড়কে যাতায়াত করা যেত না। মহিষের গাড়িও যেতে পারত না। এখন রাস্তা হওয়ায় আমরা দারুণ খুশি। আমাদের কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে যেতে পারছি। ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজ ও অফিস আদালত করতে পারছে।
চমরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই রাস্তা হওয়ায় কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। এক ও দুই ফসলি জমি হয়েছে তিন ফসলি। ক্যানেলে পানি থাকলে ধান-পাট চৈতালি হয়। আর পানি নেমে গেলে পেঁয়াজ রসুন আবাদ হয়।
দড়ি শ্রীকোল গ্রামের ভ্যানচালক ছলিম হোসেন বলেন, আগে লোহাগড়া থেকে আতাইকুলা বাজারে যেতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট লাগতো। এই রাস্তা হওয়ায় এখন ১২ থেকে ১৫ মিনিট লাগে। এতে সময় অপচয় কম হয়। মানুষও দ্রুত যাতায়াত করতে পারে।
বিএডিসি পাবনা কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, বিএডিসি এই অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় লোহাগড়া বিলের পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া সেচ খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সেই সাথে বিলের ভিতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরসিসি গোপাট সড়ক।
তিনি বলেন, সড়ক ও সেচ ক্যানেলটি ওই এলাকার কৃষি, অর্থনীতি, পরিবহণ সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ সরকারের উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে।