প্রশ্ন: আমি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এটি পরিপূর্ণভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখা হয়। জমা রাখা টাকার একটি ন্যূনতম পরিমাণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করা হয়ে থাকে। আমি ইচ্ছা করলে বেশি টাকাও জমা রাখতে পারি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সালে বেতনের প্রায় অর্ধেক জমা রেখেছিলাম। এতে আনুমানিক ১ লাখ টাকা সরকারি বাধ্যবাধকতার অতিরিক্ত জমা করেছি।
এই টাকার উপর মুনাফা দেওয়া হয়। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের সময় এই টাকা উঠানো যায়। তবে নিজ প্রয়োজনে এই টাকার ৮০ ভাগ যে কোনো সময় লোন পাওয়া যায়। তবে এই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা লাগে।
এ অবস্থায় আমার জানার প্রয়োজন-
ক) এই মুনাফা নেওয়া বৈধ হবে কি?
খ) এই জমানো টাকার উপর প্রতি বছর জাকাত আদায় করতে হবে কি?
উত্তর: সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েজ আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।
চাকরি যদি হালাল হয়, ইনকাম যদি হালাল হয় তাহলে পেনশনের টাকা চাকুরীজীবির জন্য সুদ নয়, হারামও নয়।
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত আরো টাকা নিজ থেকে কাটানো জায়েজ নেই। কেউ কাটালে এ টাকার উপর যা অতিরিক্ত দেওয়া হবে তা নাজায়েজ ও সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সুতরাং ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আপনার জন্য বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত টাকা জমা করা বৈধ হয়নি। এ কারণে আপনার সুদি চুক্তির গুনাহ হয়েছে। এখন সম্ভব হলে আপনার কর্তব্য হবে, বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত যা জমা করেছেন তার সুদসহ উঠিয়ে ফেলা এবং এই সুদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া।
আর এখন উঠানো সম্ভব না হলে চাকরি শেষে যখন সব টাকা উঠাবেন তখন হলেও ঐচ্ছিক জমাকৃত অংশের সুদ সদকা করে দিতে হবে। আর নিজ বেতনের জমাকৃত অংশ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রকাশ থাকে যে, বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল ও অতিরিক্ত হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা জাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই তা হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরের জাকাত দিতে হবে না।
আর আপনি স্বেচ্ছায় যে এক লাখ টাকা জমা করেছিলেন এ টাকার যাকাত জমার বছর থেকেই দিতে হবে। এ টাকার অতিরিক্তটা জাকাতযোগ্য নয়; বরং তা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকাযোগ্য।
সূত্র: মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস ২৫১১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৫৮