• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

অস্থির চিনির বাজার কারসাজি চক্রে

Reporter Name / ৩২ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

এবার অসাধু ব্যবসায়ীদের চোখ পড়েছে চিনির বাজারে। কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। ২ নভেম্বর পণ্যটির আমদানি শুল্ক কমানোর পর বাজারে দাম কমার কথা; কিন্তু উলটো বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন- সাত দিনে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫৫ টাকায়। এতে চিনি কিনতে এসে বিপাকে পড়ছেন ভোক্তা।

এদিকে সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ৯.৪৩ শতাংশ। ২ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাঁচা ও পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করে। দেশের বাজারে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বাস্তবে কাজে আসেনি। চিনির দাম না কমে বরং বেড়েছে। এনবিআর শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকদের
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি টন কাঁচা চিনির জন্য ১৫০০ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে, যা আগে ছিল ৩ হাজার টাকা। একইভাবে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক ৬ হাজার থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা, যা পাড়া বা মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা। সাত দিন আগে যা ১৪০ টাকা ছিল। আর এক মাস আগে এই চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেশি। এর মধ্যে চিনির দাম বেড়েছে। কেন বাড়ল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি মূল্য বৃদ্ধি এখনই যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হতে পারে। এতে ক্রেতাসাধারণের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. হেলাল বলেন, বাজারে এসব কী শুরু হয়েছে? প্রতিদিনই একেকটি পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এবার বাজারে এসে দেখি চিনির দাম বেড়েছে। এসব কি দেখার কেউ নেই।

একই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. তুহিন গণমাধ্যমকে বলেন, পাইকারি পর্যায়ে ডিলাররা চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি সরবরাহ কমিয়ে বাড়িয়েছেন দাম। ফলে বেশি দামে এনে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি ও মিল পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করলে আসল রহস্য বের করা যাবে।

এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা তানভীর হোসেন জানান, দুই দিন ধরে ৫০ কেজির বস্তা চিনি বিক্রি করেছি ৬ হাজার ৯০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬ হাজার ৪০০ টাকা। ডিলারদের কাছে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, মূলত মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে চিনির দাম বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে।

একই বাজারে আরেক পাইকারি বিক্রেতা ইবরাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমার চিনির চাহিদা ছিল ৩০ বস্তা। অথচ রোববার আমি ১০ বস্তা পেয়েছি। ডিলাররা দাম বাড়ালেও সরবরাহ করছে না। তারা কৃত্রিম সংকট করে রেখেছে। যাতে বাড়তি দামে চিনি বিক্রিতে কোনো অভিযোগ না আসে। ডিলার ও মিল পর্যায়ে তদারকি করা গেলে এ রহস্যের জট খুলবে।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. তসলিম শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। ফলে উচ্চমূল্যে চিনি কিনতে হওয়ায় দেশের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তিনি জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকে ডলারের সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঋণপত্র খুলতেও অসুবিধা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ছিল কেজিপ্রতি শূন্য দশমিক ৪০ ডলার। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৪ ডলার। আর অক্টোবরে এই দাম বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৭ ডলার।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে তদারকি অব্যাহত আছে। প্রতিদিন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি হচ্ছে। তবে চিনির দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্যটি নিয়ে বিশেষভাবে তদারকি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির অযৌক্তিক কারণ বের হয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category