• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন ও কীটনাশকের হুমকি!

Reporter Name / ৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা ঝড়-ঝণ্ডা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা, ফ্লাশ-ফ্লাট ইত্যাদির তীব্রতা ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশে আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনন্য অবদানকারী হলো কৃষিক্ষেত্র। শস্য উৎপাদন গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি করে এবং দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। সব কৃষিকাজের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কৃষিকে চরম ঝুঁকির ভেতর ফেলছে! গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং চরমভাবাপণ্য জলবায়ুর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং কৃষি সম্পদ কমে যাওয়াতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ দ্রাঘিমাংশে ফসল উৎপাদনের সময় বেড়ে যাবে। তবে ফলন বৃদ্ধি পাবে, নিম্ন দ্রাঘিমার অব-উষ্ণ ও উষ্ণ এলাকায়, যেখানে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন তাপদাহে ফলন কমে যাচ্ছে, সেখানে আরও কম ফলন হবে, মৃত্তিকা পানি বাষ্পীভবনের বৃদ্ধিতে ফলন কমে যাবে। (সূত্র: IPCC2007 & US EPA2011)। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও নিয়ম পরিবর্তন মৃত্তিকা ক্ষয় ও মৃত্তিকা বাষ্পতে প্রভাব ফেলে ফলন কমিয়ে দেবে। উচ্চ দ্রাঘিমায় বৃষ্টিপাত বেশি হবে এবং বেশিরভাগ নিম্ন দ্রাঘিমার অফ-উষ্ণ এলাকায় কম হবে (২০% পর্যন্ত) যা দীর্ঘকালীন খরার সৃষ্টি করবে। ভূপৃষ্ঠের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়বে, কিছু ফলনের বৃদ্ধি বেশি হবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবে উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত এটিকে ছাড়িয়ে যাবে। ট্রোপোষ্পেয়ারিক ওজন দূষিত পর্যায়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির কারণে, খারাপ ওজন বৃদ্ধি পাবে যা জীবন্ত কোষ-কলার ও অন্যান্য পদার্থের ক্ষতি করবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে, যার ক্ষতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাবে, ফলে ফসলের বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষিতে উষ্ণতা বা তাপমাত্রার ক্ষতিকারক প্রভাব
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের ফলন কমে যাবে। ফসলে অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ফসলের জমিতে পরাগী প্রজাপতির পরিভ্রমণ ১৪ শতাংশ হ্রাস পায়। সার্বিকভাবে পরভোজী ও পরাগী প্রজাপতির সংখ্যা কমার কারণে ব্যাপক ফসল হানি ঘটে।

কৃষিতে শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতিকারক প্রভাব
বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে শীতকালের ব্যাপ্তি ও শীতের তীব্রতা দুইই কমে আসছে। এতে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ফলন হ্রাস পাবে। ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত হবে। অতি ঠান্ডায় আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ইত্যাদি ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাবে।

কৃষিতে লোনা পানির অনুপ্রবেশ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ক্ষতিকারক প্রভাব
উজান থেকে পানি প্রবাহ বাধা ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিমিত বৃষ্টিপাতের অভাবে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে। লবণাক্ত অঞ্চলের মাটি কর্দমাক্ত হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে মাটি শক্ত হয়ে যায়। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি ও জীববৈচিত্র্য। খাবার পানি, সেচের পানির সংকট দেখা দেবে। মারা যাবে সাধু পানির মাছ। চিংড়ি প্রজাতির বৈচিত্র্যে আসবে পরিবর্তন, ক্ষতিগ্রস্ত হবে মৎস্যজীবীসহ সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা। জলবায়ুর পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে ভাঙা-গড়ার এ ভারসাম্য দিন দিন আরও প্রকট হবে।

কৃষিতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের প্রভাব
রাসায়নিক কীটনাশক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একাধিক উপাত্তের মধ্যে রয়েছে। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আবহাওয়া এবং কৃষি মাটি ইত্যাদির সাথে মিলে তাদের মধ্যস্থ কার্বন নির্গমন বাড়িয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সার্বিক কৃষি কার্যক্রমকে দিন দিন অস্বাভাবিক করে তুলছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মারা যায় এবং এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যে বিষক্রিয়া। অযাচিত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতাও কমছে। এ অবস্থায় প্রাণী ও প্রকৃতি-পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই কীটনাশকটি ব্যবহার বন্ধ করার বিকল্প নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রটেকশন বিভাগের এক সূত্র বলছে, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪২ হাজার টন বালাইনাশক ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হয় প্রকৃতি ও পরিবেশকে। কারণ এর ধারাবাহিক প্রয়োগে নষ্ট হয় মাটির গুণাগুণ। মরে যায় উপকারী অনুজীব। অন্যদিকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে তৈরি করে ক্যানসার-হাঁপানির মতো জটিল রোগ-ব্যাধি। মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে। শিশুর বিকলাঙ্গতা তৈরি করে। তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে।

জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের করা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। রাসায়নিক কীটনাশক বিক্রির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠিন নজরদারি এবং অভিযান পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবি। এর যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ না করা গেলে মানবদেহ ও প্রকৃতির ক্ষতি আরও বাড়বে।

তাপদাহ, খরা, বন্যা ও হারিকেনের তীব্রতা ও সংখ্যা বেড়ে কৃষিতে অনিশ্চয়তার নিয়ামক বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর ৬.৭ বিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ৪০% (২.৫ বিলিয়ন) কৃষির ওপর তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। যারা সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব ক্ষতি এড়াতে বর্তমান কৃষি কৌশল পরিবর্তন করতে হবে এবং নতুন প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবন করে সমস্যা কবলিত পরিস্থিতি ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণে রেখে বেশি ফলন ফলাতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category