• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১০ অপরাহ্ন

ক্রেতার নাভিশ্বাস মাংসের বাড়তি দামে

Reporter Name / ১০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

অন্যান্য পণ্যের মতো মাংসের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। কারসাজির মাধ্যমে প্রতি রাতে মুরগির দাম নির্ধারণ করছে তারা। এতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ক্রেতাকে ২৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি এক কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সপ্তাহে যারা একবার মাংস কিনতেন, এখন তারা মাসে একবার কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন। আর গরিবের জন্য এই মাংস রীতিমতো মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বাজারে গিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছেন। আবার অনেকেই দাম শুনে নিরুপায় হয়ে ঘোরাফেরা করছেন। অর্থাৎ তাদের সাধ আছে ঠিকই, কিন্তু কেনার সাধ্য হচ্ছে না। সোমবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শুক্রবার ২৯টি কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এর মধ্যে গরু, মুরগি ও খাসির মাংসের দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বেচাকেনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে অধিদপ্তর। কিন্তু বাজার ঘুরে নির্ধারিত দামে মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে গরুর মাংস কেজিতে সর্বোচ্চ ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা এবং খাসির মাংস ১০০৩ টাকা ৫৬ পয়সায় বিক্রি করতে হবে। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ ও ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা।

বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা। ডিসেম্বরে এর দাম ছিল ১৭০ টাকা আর নভেম্বরে ছিল ১৮৫ টাকা। পাশাপাশি নভেম্বর থেকে কমতে থাকে গরুর মাংসের দাম। সে সময় প্রতিকেজি বিক্রি হতো ৭০০ টাকা। ডিসেম্বরে দাম কমে বিক্রি হয় ৫৫০-৬০০ টাকা। নির্বাচনের পর দাম কিছুটা বেড়ে ৬০০-৬৫০ টাকা হয়। এরপর ফের ফেরুয়ারিতে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭০০-৭৫০ টাকা। আর রোজার মধ্যে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা। তবে রাজধানীর দু-একটি দোকানে ৫৯৫ টাকা কেজিদরে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতারা এই মাংস কিনতে গরুর সব স্থানের হাড় ও মাংস মিলিয়ে বিক্রি করছে। তাই ক্রেতার লাভের তুলনায় লোকসানই গুনতে হচ্ছে।

সকাল ১০টায় রাজধানীর নয়াবাজারে অন্যান্য ক্রেতার মতো গরুর মাংসের দোকানে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অনেকদিন ধরে ছেলেমেয়ে গরুর মাংস খেতে চাচ্ছে। তাই মাংসের দোকানে আসা। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭৫০ টাকা। তবে হাড় ছাড়া মাংস ৮০০ টাকা চাইছে। তাই আধা কেজি দিতে বলেছি। তিনি জানান, এক সময় সপ্তাহে একদিন হলেও গরুর মাংস কেনা হতো, এখন মাসে একবারও কিনতে পারি না। এ ছাড়া সব ধরনের মুরগির দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই মাংস কেনা যেন দায় হয়ে পড়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যেভাবে বাজারে মাংসের দাম বাড়ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত যে উৎপাদন ব্যয়, তার চেয়ে বাজারের দাম অনেক বেশি। তাই সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে। কেন এত দাম, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অনিয়ম পেলে অসাধুদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ দাম বাড়ায় গরিবের আমিষে টান পড়ছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সব সময় মাংসের দাম সিটি করপোরেশন ঠিক করে। বর্তমানে তারা মূল্য নির্ধারণ করছে না। এছাড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবার মাংসের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। সে মোতাবেক বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি করা হচ্ছে। অধিদপ্তরের টিম সার্বিকভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category