• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা সংঘর্ষে আহত ২০

Reporter Name / ১৭ Time View
Update : শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের সামনেই রামদা হাতে হাতে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে রাত আটটার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের অন্তত ৬০ জন নেতা-কর্মীকে রামদা হাতে দেখা গেছে।

সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের এ দুটি পক্ষ হলো সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। এর মধ্যে সিএফসির নেতা-কর্মীরা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সিক্সটি নাইন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।

আহত হওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের চারজন, সিএফসির অন্তত ১৩ জন রয়েছেন। সিএফসি উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

১৮ ঘণ্টা ব্যবধানে আবার সংঘর্ষে জড়াল ছাত্রলীগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁদের এখানে মোট ১৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের শরীরে কুপিয়ে জখম করার চিহ্ন ছিল। এই চারজনের মধ্যে আবার একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর বাকি নয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

যেভাবে সূত্রপাত

ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসা নিয়ে দুই পক্ষের দুই কর্মীর কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছিল। দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছিলেন। রাতের সংঘর্ষের ঘটনা পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তবে দুই পক্ষের উত্তেজনা কমেনি।

শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে সিএফসির কয়েকজন কর্মী স্টেশন এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ এলাকায় যেতে হলে শাহজালাল হলের সামনে দিয়ে যেতে হয়। শাহজালাল হলের নিয়ন্ত্রণ আছে সিক্সটি নাইনের। এ সময় সিএফসির কর্মীদের সঙ্গে সিক্সটি নাইনের কর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এর রেশ ধরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দলাদলিতে অস্থিরতা

শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সংঘর্ষ এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা শাহজালাল ও সিএফসির নেতারা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া দিচ্ছিলেন। দুটি হল পাশাপাশি। উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপ করছেন। নেতা-কর্মীরা আবাসিক হলের কক্ষ ও শৌচাগারের দরজা, খাট রাস্তায় এনে ঢাল (শিল্ড) হিসেবে ব্যবহার করছেন। এভাবে একে অপরের ইটপাটকেল আটকাচ্ছেন।

পরে ছয়টার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় পুলিশকে মাঝখানে রেখেই দুই পক্ষকে একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।

পরে সাড়ে ছয়টার দিকে সিএফসি উপপক্ষের শহীদ আব্দুর রব হলের নেতা কর্মীরা আমানত হলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন সংঘর্ষ আরও বড় আকার ধারণ করে। পরে কয়েক দফা চেষ্টার পর রাত আটটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। পরে উভয় পক্ষের নেতা কর্মীদের হলের ভেতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

হলে তল্লাশি

এদিকে সংঘর্ষের এ ঘটনার পর তিনটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। এ তিনটি হল হলো, শাহজালাল, শাহ আমানত ও শহীদ আব্দুর রব হল। রাত সাড়ে নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলা এ তল্লাশিতে তিনটি রামদা, তিনটি কিরিচ ও ৮টি রড উদ্ধার করেছে পুলিশ। যদিও সংঘর্ষের সময় অন্তত ৬০ জনকে ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে চানতে চাইলে প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করতে প্রয়োজনে আবার তল্লাশি দেওয়া হবে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সংঘর্ষের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সিএফসির নেতা কর্মীরা তাঁদের ওপর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁদের চারজন আহত হয়েছেন। পরে তাঁরা এটি প্রতিহত করেছেন।

সিএফসির নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির গণমাধ্যমকে বলেন, সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরাই আগে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁদের অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার সাড়ে রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে বলেন, সংঘর্ষে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ করছেন। পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর।

তবে পুলিশ সদস্য আহতের বিষয়টি অস্বীকার করেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান। তিনি ঘটনাস্থল থেকে  বলেন, তাঁদের কেউ আহত হয়নি। বিস্তারিত পরে বলবেন। পুলিশের উপস্থিততেই প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা এখানে মারামারি করতে আসেননি। মারামারিতে লিপ্ত দুইটা পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে এসেছেন। তাঁদের যার যার হলে উঠিয়ে দিতে এসেছেন। কারণ তাঁরা সবাই ছাত্র, পেশাদার কোনো সন্ত্রাসী নয়৷

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর কমিটি বাতিল করে কেন্দ্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ১১টি পক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে আ জ ম নাছিরের ৯টি আর বাকি ২টি মহিবুল হাসানের পক্ষ বলে পরিচয় দেন।

বিবদমান সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত পাঁচ বছরে এ দুটি পক্ষের মধ্যে অন্তত ১৬ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক নেতা আহত হয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category