• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন

জহির ও জাকির নামের দুই ব্যক্তি আইফোন চুরি করে ব্যাংক থেকে সাড়ে ২৮ লাখ টাকা তুলে নেন

Reporter Name / ২৭ Time View
Update : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

আইফোন ও ব্যাংক থেকে টাকা চুরির মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হন জহির ও জাকির নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা সম্পর্কে দুলাভাই-শ্যালক।

গ্রেপ্তারের পর জহির-জাকিরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের কেরানীগঞ্জের আরশিনগরের তিন কক্ষের যৌথ বাসায় অভিযানে যায় পুলিশ।

অভিযানকালে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে তিনি দেখেন, বাসাভর্তি নতুন নতুন আসবাব। এর মধ্যে আছে খাট, সোফাসেট, ডাইনিং টেবিল। আছে ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিক পণ্যও। এ ছাড়া বাসায় কার্টনভর্তি নতুন শিশুখাদ্যও দেখা যায়।

অভিযানকালে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জহির ও জাকির স্বীকার করেন, চুরির টাকা একাধিক ব্যক্তির (চোর) মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করেছেন তাঁরা। নিজেদের ভাগের টাকা দিয়ে তাঁরা নতুন আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিস কিনেছেন। এ ছাড়া অন্য কাজেও তাঁরা টাকা লাগিয়েছেন।

চুরির টাকায় কেনা আসবাবপত্র
চুরির টাকায় কেনা আসবাবপত্রছবি: সংগৃহীত

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাইদুল বলছেন, তিনি তাঁর আইফোনসহ চুরি হওয়া প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ ফেরত চান।

তবে পুলিশ বলছে, তারা খুব বেশি টাকা উদ্ধার করতে পারেনি।

সাইদুল (৩৯) পুরান ঢাকার বাদামতলী এলাকার ফল ব্যবসায়ী। বাদামতলী এলাকাতেই তিনি থাকেন। গত বৃহস্পতিবার সাইদুল বলেন, তিনি বিদেশ থেকে ফল আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এটা তাঁর পারিবারিক ব্যবসা। গত ২ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার ডরিন বেকারির সামনে থেকে তাঁর আইফোন-১৩ প্রো মুঠোফোনটি পাঞ্জাবির পকেট থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে মুঠোফোন ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে তাঁর মোট ২৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার বেশি তুলে নেয় চোর। এ ঘটনায় তিনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।

ঘটনা সম্পর্কে সাইদুল বলেন, আইফোন চুরির হয়ে গেছে—তা টের পাওয়ামাত্রই তিনি তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল দেন। নম্বর সচল থাকলেও তখন কেউ ধরেননি। দুপুরের দিকে এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। বলেন, তিনি একজনের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক, গাজীপুর যাচ্ছেন। সন্ধ্যার দিকে তিনি ঢাকায় ফিরে মুঠোফোন ফেরত দিয়ে দেবেন। সন্ধ্যায় কথিত গাড়িচালক ফোন ফেরত দেননি। রাতে ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ৩ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে একই ব্যক্তি ফোন ধরেন। জানান, তিনি ৪ নভেম্বর মুঠোফোনটি ফেরত দেবেন। তবে ৪ নভেম্বর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া চুরির মুঠোফোন
পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া চুরির মুঠোফোনছবি: সংগৃহীত

সাইদুল বলেন, ৫ নভেম্বরও নম্বর বন্ধ পান তিনি। এদিন বেলা ১১টার দিকে বাদামতলীর অফিসে বসে তিনি তাঁর ল্যাপটপ চালু করেন। জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে দেখেন, ৩৬ ঘণ্টা আগে পাসওয়ার্ড পাল্টানো হয়েছে। তখন তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি অফিসের কর্মীকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইসলামপুর শাখায় তাঁর ব্যাংক হিসাবের বিবরণী তুলতে পাঠান। বিবরণীতে দেখা যায়, হিসাব থেকে ১২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে পাঠানো হয়েছে। পরে তিনি অন্যান্য ব্যাংকে থাকা তাঁর হিসাবের খোঁজ নেন। দেখেন, ইসলামী ব্যাংকের সদরঘাট শাখার হিসাব থেকে ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ টাকা, ঢাকা ব্যাংকের বাদামতলী উপশাখার হিসাব থেকে ৩০ হাজার টাকা বিকাশ নম্বরে পাঠানো হয়েছে। ২ নভেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই টাকা তুলে নেয় চোর।

সাইদুল বলেন, তিনি ৫ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে যান। ৭ নভেম্বর দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় (চুরির অভিযোগ) অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মামলা নথিভুক্ত করে পুলিশ। মামলায় মুঠোফোনের মূল্যসহ মোট চুরির পরিমাণ ধরা হয় ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই মামলায় গত ২০ নভেম্বর ৬ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ।

সাইদুল বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে দুজনের (জহির ও জাকির) কেরানীগঞ্জের আরশিনগরের বাসায় গত ২১ নভেম্বর অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানকালে তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। অভিযানকালে বাসাটিতে জহিরের স্ত্রী ও শিশুসন্তান ছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জহির বলেন, বাসায় থাকা নতুন আসবাবপত্র চুরির টাকায় কিনেছেন। জহিরের শ্যালক জাকির বলেন, তিনি তাঁর ভাগের ৬ লাখ টাকা মাকে পাঠিয়েছেন। পুলিশ মুঠোফোন লাউডস্পিকারে রেখে জাকিরকে তাঁর মাকে ফোন দিতে বলে। জাকিরের মা ফোনে বলেন, তিনি টাকা দেবেন না। পুলিশ আর কত দিন জাকিরকে আটকে রাখতে পারবে!

সাইদুল বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো টাকা ফেরত পাননি।

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির গত বৃহস্পতিবার বলেন, চক্রটি বহুদিন ধরে মুঠোফোন চুরি করে লোকজনের টাকা তুলে নিচ্ছিল।

সাইদুলের চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে কতটা উদ্ধার হয়েছে, তা জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন কবির বলেন, ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাসাটি থেকে শ খানেক মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। তবে সাইদুলের আইফোনটি পাওয়া যায়নি।

সাইদুলের বাকি টাকা উদ্ধার হবে কি না, তা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন কবির বলেন, কত টাকা উদ্ধার করা যায়, তা দেখতে হবে। গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে একজন তাঁর ভাগের টাকা বিদেশে বাবার কাছে হুন্ডি করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আরেকজন জমি নিবন্ধন করেছেন। কেউ আসবাবপত্র কিনে ফেলেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category