আফ্রিকার দেশ সুদানের রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী (প্যারামিলিটারি) র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের চলা সংঘর্ষ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত ছিল।
জাতিসংঘের প্রস্তাবে তিন ঘন্টার ‘জরুরি মানবিক যুদ্ধবিরতি’ পালন করলেও সুদানজুড়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১০০ নিহত ও আহত হাজার ছাড়িয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে প্রথমদিন দুই পক্ষই বিভিন্ন জায়গায় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করে বিবৃতিতে দেয়। কিন্তু তৃতীয় দিনের মাথায় এসে রাজধানী খার্তুমে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, লড়াইয়ে এখন সেনাবাহিনী এগিয়ে গেছে।
আরএসএফ দাবি করেছিল, রাজধানী খার্তুম, পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমান, দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে, সুদানের উত্তরে মেরোওয়ে বিমানবন্দরের অংশগুলো দখলে নিয়েছে। পরবর্তীতে বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু জায়গায় পুনরুদ্ধার করেছে জানিয়ে পাল্টা বিবৃতিতে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
রয়টার্সকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আরএসএফের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোয় লড়াইয়ে এগিয়ে গেছে সেনাবাহিনী।
কিন্তু ভোরে সুদানের প্রেসিডেন্টের বাসভবন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়, গ্রাউন্ড ফোর্সের সদর দফতর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে একে বিজয় বলে আবারও দাবি করেছে আরএসএফ।
এর আগে দুইপক্ষ যুদ্ধ বন্ধ রাখতে রাজি হয়। জতিসংঘ থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট ওই তিন ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি পালন করার এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। যাতে পরে সমর্থন দেন সুদান সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল বুরহান এবং আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালু।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি বিদ্রোহী বাহিনী ওই চুক্তির কোনো ধরনের লঙ্ঘন করে, তবে তার জবার তারা পাবে।
সম্প্রতি আধা সামরিক বাহিনী আরএফএস সদস্যদের গোটা সুদানে পুনরায় মোতায়েন করা হয়। সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী এটিকে তখন থেকেই একটি হুমকি হিসাবে দেখে আসছে।
আলোচনার মাধ্যমে সেনা মোতায়েন প্রত্যাহারের বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টাও করা হয়। তবে কোনো লাভ হয়নি।
মূলত এর জের ধরেই শনিবার সকালে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তবে কোন বাহিনী প্রথম হামলা শুরু করে তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
২০২১ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিলের’ নামে দেশ চালাচ্ছিলেন।
এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।
বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনী বলছ, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে এই একীভূত করণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।