• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

৩ সংস্থার খরচ হয়েছে ৬৮৩৮ কোটি টাকা, বাজার নিয়ন্ত্রণে।

Reporter Name / ১৭৬ Time View
Update : শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিগত ৫ বছরে সরকারের তিনটি সংস্থা ব্যয় করেছে ৬ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। এগুলো হচ্ছে-ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি, বাজার মনিটরিং, সভা-সেমিনার ও সংস্থার কর্মীদের বেতন-ভাতায় এ ব্যয় হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এর সত্যতা মিলেছে টিসিবির পরিসংখ্যানেও। সংস্থটির দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫ বছরের ব্যবধানে (২০১৮-২৩) খুচরা বাজারে চালের মূল্য বেড়েছে গড়ে ১৩.৩৮ শতাংশ, আটা ৮০.৮২ শতাংশ, ময়দা ৭০.৩৩ শতাংশ, সয়াবিন ৭২.৫ শতাংশ, পামঅয়েল ১৩৩.৩ শতাংশ, ডাল ৪২.৫৩ শতাংশ এবং চিনি ৭২.৮৭ শতাংশ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মধ্যে আজ শুরু হয়েছে রোজার বাজার।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো উচিত। এগুলোর কার্যক্রমের শর্তগুলো কিভাবে প্রতিপালন করবে, সুষ্ঠুভাবে বাজার উন্নত করবে সে সম্পর্কে একটি নীতি ও কার্যক্রম থাকা দরকার। এছাড়া ভোক্তার জন্য পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম চালু করার বিষয়টিও ভাবতে হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ (২৩ মার্চ পর্যন্ত) এই ৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে টিসিবি। সংস্থাটির মোট ব্যয়ের অঙ্ক ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ব্যয় করেছে ১০৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ব্যয়ের অঙ্ক ৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু এসব ব্যয় বাজার নিয়ন্ত্রণে কতটা সুফল আনছে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

জানতে চাইলে সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস’র সাবেক ডিজি এমকে মুজেরি বলেন, বাজার প্রতিযোগী হলে অন্যায্য মূল্য বাড়বে না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পণ্যের বাজার ঠিকভাবে কাজ করছে না। যে কারণে মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিকভাবে ঘটছে। প্রশ্ন উঠেছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো তাহলে কি উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানো উচিত। সংস্থাগুলোর কার্যক্রম কিভাবে প্রতিপালন করবে, সুষ্ঠুভাবে বাজার উন্নত করবে সে সম্পর্কে একটি নীতি ও কার্যক্রম থাকা উচিত। তার ভিত্তিতে কাজ করা হলে নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থা উন্নত হতে পারে এবং অযৌক্তিক মূল্য বাড়বে না। প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কার্যক্রম দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

সূত্রমতে, বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির কাজ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের। এ সংস্থার কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা করেছে। এরমধ্যে কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছে তিনটি। মামলাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে দুটি। এছাড়া ইভ্যালি ডটকম, যাং গস ইলেকট্রিক লিমিটেড, রবি আজিয়াটা, ফুড পান্ডার বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে। পাশাপাশি লবণের বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, সিন্ডিকেট করে রডের মূল্য বৃদ্ধি, লাইটার জাহাজের ভাড়া অতিরিক্ত আদায়, মুদ্রণ শিল্পে অসুস্থ প্রতিযোগিতার অভিযোগেও দায়েরকৃত মামলাগুলোর শুনানি চলমান আছে। এসব কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে প্রতিষ্ঠানটি। আর সর্বশেষ ১৮ মার্চ কমিশনের বাজার মনিটরিং সেল ঢাকা মহানগরীর কাওরান বাজারের কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী ও কিচেন মার্কেট মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে বিরোধী কর্মকাণ্ডের তথ্য কমিশনকে অবহিত করার আহ্বান জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, কমিশন একটি নির্দিষ্ট পণ্যের বিষয় এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর সরকারকে সুপারিশ করে থাকে। এছাড়া বাজার মনিটরিং করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগে বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। নীতিগত বিষয়গুলো নিয়েও কাজ চলছে।

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে টিসিবিও। স্থানীয় বাজার এবং বিশ্ববাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে টিসিবি। বর্তমানে সাশ্রয়ী মূল্যে পুরো দেশে এক কোটি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে ডাল, তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর দিচ্ছে টিসিবি। কিন্তু দেশের মোট চাহিদার ১০ শতাংশও পূরণ করছে না। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে দেওয়ার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না। সংস্থাটির এক হিসাবে ২০১৬-২২ পর্যন্ত এই ৬ অর্থবছরে চিনি, ছোলা, ডালম পেঁয়াজ ও খেজুর মিলে মোট ৪ লাখ ২১ হাজার ৭ টন পণ্য ন্যয্যমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেছে। আর ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত এই ১০ অবছরে প্রতিষ্ঠানকে ভতুকি দেওয়া হয়েছে ৪৮৯ কোটি টাকা। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে আরও ২১৭ কোটি টাকা। এটি ছাড় করা হলে ভর্তুকির মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০৬ কোটি টাকা।

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সরাসরি বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করছে। তবে সারা বছর কাজ করলেও রোজায় এ সংস্থার তৎপরতা বেশি দেখা যায়। সংস্থাটির হিসাবে গত ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ হাজার বাজারে অভিযান চালিয়ে ৯০ হাজার প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দণ্ড দেওয়া হয়।

এরপরও কেন বাজারে সুফল আসছে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতি ও প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে না পারলে মূল্য নিয়ন্ত্রণ কোনো সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভারতে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম আছে, আমাদের নেই। এটি করতে পারলে ভোক্তার সুফল বয়ে আনবে। তবে তার মতে, প্র্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ দৃশ্যমান দেখছি না। এ কমিশনের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। অন্য সংস্থাগুলো কৌশল অনুযায়ী কাজ করছে। তাদেরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকার যে কাজ দিচ্ছে টিসিবি সেটি করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category